অনলাইন ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জের জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ২৫ শ্রমিকদের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। তাদের ঈদ আনন্দ যেন নিমিষেই ফিকে হয়ে গেছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার ১৫টি গ্রামের ২৫ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। এখনও নিখোঁজদের স্বজনদের আহাজারিতে স্তব্ধ এলাকাসহ আশপাশের পরিবেশ। নিখোঁজদের মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটছে স্বজনদের। নেই ঈদের আনন্দ। এখনও নিখোঁজদের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
নিখোঁজ ২৫ শ্রমিক ছাড়াও এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা উত্তর কান্দাইল গ্রামের হারুন মিয়ার স্ত্রীর মিনা আক্তার (৩৩)। অপরদিকে তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়ে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন কটিয়াদী উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের আসমা আক্তার, পারুল আক্তর ও সোহাগ মিয়া নামে তিন শ্রমিক। তাদের পরিবারেও নেই ঈদের আনন্দ।
নিখোঁজদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি কালিয়াকান্দা গ্রামের দিনমজুর চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুল ইসলাম এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় অভাবের সংসারে ঈদের কেনাকাটার অর্থ সংগ্রহে কাজে যোগ দিয়েছিল শ্রমিক হিসেবে। মায়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল বেতন বোনাসসহ বাড়িতে আসবে, মা-বাবা ও বোনদের জন্য ঈদের নতুন জামা কিনবে। কিন্তু নিষ্ঠুর আগুন বুকের মানিককে কেড়ে নিয়েছে বলে আহাজারি করছেন নাজমুলের মা মিনা বেগম।
অপরদিকে করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা কদমতলী গ্রামের দিনমজুর মালেক মিয়ার মেয়ে মাহমুদা ও কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া গৌরীপুর গ্রামের দরিদ্র বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাসলিমা অভাবের সংসারের হাল ধরার পাশাপাশি নিজেদের বিয়ের অর্থ সংগ্রহে ওই কারখানার শ্রমিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের সংগ্রামী জীবনের গল্প শেষ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। তাদের পরিবারেও এখন চলছে শুধু আহাজারি। নিখোঁজদের স্বজনরা জানান, মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ টেস্টের নমুনা দেওয়া হয়েছে। এখন পরিবারের লোকজন মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। কারাখানা কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ কিশোরগঞ্জের শ্রমিকরা হলো-সদর উপজেলার বৌলাই দক্ষিণ রাজকুন্তি গ্রামের আব্দুল কাদিরের মেয়ে আমেনা, শেওড়া গ্রামের কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা, জালিয়া গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা বেগম, কালিয়ারকান্দা গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুল ইসলাম, বড়খালের পাড়ের আজিজুল হকের মেয়ে রহিমা আক্তার (৪০), রঘুনন্দনপুরের মালেকের মেয়ে মাহমুদা বেগম, ব্রাহ্মণকান্দি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে শাহানা বেগম, করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা উত্তর কান্দাইল গ্রামের মিনা আক্তার (৩৩), মথুরাপাড়া গ্রামের খোকন মিয়ার স্ত্রী জাহানারা (৩৫), আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী পাখিমা (৩৪), তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম (১৮), দক্ষিণ নানশ্রীর মাসুদের ছেলে সোহাগ (১৩), মুলামখারচরের সুজনের মেয়ে ফাতেমা আক্তার, চাতল গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা আক্তার, সাঁইটুটা গ্রামের স্বপন মিয়ার মেয়ে শায়লা আক্তার, একই গ্রামের আহাদ মিয়া, কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া গৌরিপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাছলিমা বেগম, চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবেয়া বেগম ও মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী গ্রামের সেলিমের মেয়ে সেলিনা বেগম (১৪)।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম গণমাধ্যমে জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রাথমিক তালিকানুযায়ী রূপগঞ্জ ট্রাজেডিতে ২৫ জন নারী-পুরুষ নিখোঁজ থাকার তথ্য মিলেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নিহত করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা কুকিমাদল গ্রামের হারুনুর রশীদের স্ত্রী মিনা আক্তারের পরিবারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা এবং কটিয়াদী উপজেলার আহত পারুল আক্তারকে ৫০ হাজার টাকা অর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মরদেহ শনাক্ত ও পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সূত্র ও ছবি : দৈনিক জনকণ্ঠ।