বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলারের গল্প

বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সিরিয়াল কিলারের গল্প

অনলাইন ডেস্ক :

বাস্তবেও এমন এক শিশু সিরিয়াল কিলার রয়েছে ভারতে যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ খুনী! সাইকোলোজিস্টরাও সেই শিশুর সাথে কথা বলে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। কেননা তাদের কোনো প্রশ্নের জবাবই সে ঠিকঠাক দেয়নি। কেবল হেসেছে। প্রত্যেকটা খুন করার পরেই সে অস্বাভাবিকভাবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়তো। ৮ বছর বয়সে ৩ খুন করার পর পুলিশের কাছে ধরা পড়ে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ এই সিরিয়াল কিলার অমরজিৎ সাদা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অমরজিৎ অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়। এমন মানসিক রোগে আক্রান্তরা শুধু অন্যকে কষ্ট দিতেই জানে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেই সিরিয়াল কিলারের জীবনী ও বর্তমান অবস্থা।

অমরজিৎ সাদার জন্ম ১৯৯৬ সালে ভারতের বিহারের রাজ্যের মুশাহার গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। নিজের আপন বোনসহ ৩টি শিশুকে হত্যার দায়ে সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। ২০০৪ সালে ৭ বছর বয়সে অমরজিৎ প্রথম খুন করে তার ৬ বছর বয়সী চাচাতো বোনকে। এরপর অমরজিৎ তার নিজের ৮ মাসের বোনকেও খুন করে। এ বিষয়ে অমরজিতের চাচা গণমাধ্যমকে বলেন, পরিবারের সবাই ওর খুনের বিষয়গুলো জানতো। তবে পারিবারিক বিষয় বলে বাইরে জানাজানি করতে চায়নি। ২০০৭ সালে অমরজিৎ তৃতীয় খুনটি করে। খুশবু নামের ৬ মাস বয়সী এক শিশুকে। খুশবুর মা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি যখন স্কুলে গিয়েছিলেন; তখন শিশুটি ঘুমাচ্ছিল।

স্কুল থেকে ফিরে তিনি খুশবুকে খুঁজতে থাকেন। খুশবুকে কোথাও না পেয়ে শিশুটির মা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তল্লাশি শুরু করে। ওই সময় গ্রামে আগের দুইটি শিশু খুনের কথাও উঠে আসে। অমরজিৎ সাদার দিকেও আঙুল তোলে কেউ কেউ। পুলিশ প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও শেষ পর্যন্ত অমরজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অকপটে সব স্বীকার করতে শুরু করে সে। নিজেই দেখিয়ে দেয় খুশবুকে মেরে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে। কীভাবে খুন করেছে জানতে চাইলে সে বলে, প্রথমে সে শিশুটিকে গলা টিপে মারার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইট দিয়ে শিশুটির মাথা থেঁতলে দেয়। এরপর লাশ পুঁতে রেখেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় অমরজিৎকে জিজ্ঞেস করা হয়, কেন সে এমনটা করলো? কোনো জবাব না দিয়ে অমরজিৎ কেবল হাসে। মাঝে মাঝে কেবল এটা সেটার জবাব দেয়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে বলে, আমার ক্ষুধা লেগেছে। বিস্কুট খাবো।

ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনা তোলার পর ভারতের পাটনার মনোবিদ শামশাদ হুসেন সেই সময় জানিয়েছিলেন, অমরজিৎ আসলে স্যাডিস্ট। আঘাত করে, মানুষকে কষ্ট দিয়েই তার আনন্দ। এই বিকৃতি এক গভীর মানসিক অসুখ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মনোবিদরা জানিয়েছেন, ছেলেটির মধ্যে অনুচিত-উচিত, ঠিক-ভুল জাতীয় কোনও বোধই তৈরি হয়নি। তাই নৃশংস খুনের পরেও তার মনের মধ্যে একচিলতে অপরাধবোধও জন্ম নেয় না।

শিশু অপরাধী হিসেবে অমরজিৎ-কে প্রথমে চিলড্রেন্স হোমে রাখা হয়। এরপর টানা ৩ বছর তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কাউন্সিলিং করানো হয়। ১৮ বছর বয়সে ২০১৬ সালে সে মুক্তি পায়। বয়স কম থাকায় ও মানসিক রোগের কারণে বিচারকরা তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাননি। এজন্য তাকে মুক্তি দেয়া হয়। বর্তমানে অমরজিতের বয়স ২৬ বছর। তার ঠিকানা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তার নাম অমরজিৎ পরিবর্তন করে সমরজিৎ করে দেয়া হয়েছে। তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সব তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। তবে তার নাম এখনও ভেসে রয়েছে ভারতের অপরাধ জগতের এক ভয়ংকর মিথ হয়ে। তবে সারা পৃথিবীতে অমরজিৎ একা নয়। এই ধরনের নজির আরও রয়েছে। ১৯৯৩ সালে দেখা মিলেছিল জোন ভেনাবেলস ও রবার্ট থম্পসন নামের জোড়া সিরিয়াল কিলারের। দু’জনেরই বয়স ১০ বছর। একসঙ্গে তারা খুন করেছিল একটি ২ বছরের শিশুকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *