বঙ্গবন্ধু্কে নিয়ে নেয়ামুল নাসির-এর শত লাইনের কবিতা

বঙ্গবন্ধু্কে নিয়ে নেয়ামুল নাসির-এর শত লাইনের কবিতা

বঙ্গবন্ধু্কে নিয়ে নেয়ামুল নাসির-এর শত লাইনের কবিতা

বঙ্গবন্ধু থেকে তুমি বিশ্ববন্ধু, ছড়িয়ে দিলে আলো
তোমার আলোয় আলোক পৃথ্বী, সূর্য ঝলোমলো।
তোমার আলোয় আলোক ছটা, রোদেলা রৌদ্দূর
তোমার আলোয় চাঁদের জটা, বিশাল সমুদ্দুর।
তোমার আভায় স্বপ্ন বিভোর, নিটোল রাতের তারা
তোমার ছোঁয়ায় মুক্তির মশাল ভীষণ ছন্নছাড়া।
তোমার ছোঁয়ায় শান্ত হাওয়া-কালবৈশাখী ঝড়
ভয়ে কাতর আয়ুব-ভুট্টোর মস্তক বিহীন ধর।
তোমার ভাষণ বাঘের গর্জন, অস্থির সুন্দরবন
ঝঙ্কার তোলে বঙ্গোপসাগর, স্বস্তির আস্ফালন।

বঙ্গবন্ধু থেকে তুমি বিশ্ববন্ধু, কিংবদন্তি এক নেতা
বিদ্রোহ,বিক্ষোভ,দাবানলে-ভীষণ স্বাধীনচেতা।
সংগ্রামীর বুকে রক্ত মিছিল, তুমি বিপ্লবী কন্ঠস্বর
প্রমত্ত পদ্মার উচ্ছ্বল ঢেউ, তুমি প্রকান্ড দামোদর।
তুমি আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ, ভয়াল আগ্নেয়গিরি
তুমি বাংলা ওবাঙালির মুক্তিদূত, নিত্য স্বপ্ন সিড়ি।
তুমি কালের প্রতিধ্বনি, আর্তের আত্তি মানবতা
তুমি ৫২-ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা।
তুমি ৬-দফার অমর দাবী, শোষিতের আস্তানায়
বঞ্চিতের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা, তুমি স্বস্তির হিমালয়।

তুমি আকাশে বাতাসে দীপ্ত ক্ষিপ্ত ক্ষ্যাপা যুগান্তর
তুমি প্রভাতী আলোয় ঝলোমলো চাপা তেপান্তর।
ইন্দিরাগান্ধির আস্থার প্রতীক তুমি, অগ্নি বিবর্জিত
নেলসন ম্যান্ডেলার পরম বন্ধু, কাস্ত্রোর পরিক্ষীত।
জয় বাংলা মুখরিত তব ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান
ইয়াহিয়ার বুকে উত্তাল ঢেউ, ভুট্টোর বুকে তুফান।
তুমি পাপীষ্টের নাটকীয় আগরতলার কুট ষড়যন্ত্র
ভেঙেচুরে গড়লে বাঙালির স্বাধীকারের মুলমন্ত্র।
বিশ্বের বুকে মাথা ঠুকে তুমি জানালে বঙ্গ মধুকর
যুদ্ধংজয়ী বীর তুমি, বাঙালীর আজব জাদুকর।

তুমি শরীরের কাঁপন, ৭’মার্চের রেসকোর্সের ভাষণ
তুমি আয়ুব,ইয়াহিয়া ভুট্টোর বুকে অগ্নি সিংহাসন
তুমি নিগূঢ় সিদ্ধান্ত, ছুটন্ত নদীর ছলাৎ ছলাৎ জল
বিজয় মন্তে অকস্মাৎ তুমি, পৃথিবীর কালানল।
তুমি আর্তের আর্তি,ফুর্তি সব মুর্ত নিরন্ন মানুষের
তুমি শত্রুর বুকে ধারাল এক, তটস্থ উলঙ্গ শমসের
তুমি নিজেকে করেছ জন-দাস, দেশপ্রেমী ভৃত্য
নিজেকে শূন্য করে দিয়েছ পূর্ণ করে বঙ্গ মানচিত্র
তুমি বাঙালীর নিশ্বাসে-বিশ্বাসে, প্রতিবাদী কন্ঠস্বর
তুমি জাতিরপিতা, বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর।

তোমার ভাষণ জগত শাসন, অভিভূত মাহাথির
এ যেন মরিবার উন্মাদনা, সাত কোটি বাঙ্গালির।
তুমি সংহত সংযত দৃঢ় প্রাণ, বজ্র কঠিন ঝড়ে তোমার ভয়ে দুঃশাসকেরা বাতাসে নড়বড় করে।
তুমি হিন্দু মুসলিম সবাইকে বললে বাঙ্গালী ভাই
পীড়িতকে করলে চির আপন, আর্তকে দিলে ঠাঁই।
তোমার অক্ষয় বীজ অঙ্কুরিত, অনাগত সন্ধ্যায়
আকাশে বাতাসে গোধূলির বুকে তারায় তারায়।
নক্ষত্রের বুকে বিদ্যমান তব জগত জোড়া খ্যাতি
বাংলাকে করেছে মহান, তোমায় দিয়েছে জ্যোতি।

তুমি মিয়ালীর লাল কারাগারের ভয় ছিন্ন করি
বুলেটের ভয়,চাবুকের ভয়, মৃত্যু ভয় দীর্ণ করি,
ফাঁসির মঞ্চকে বানালে হাসির মঞ্চ, জনতার পাল
মুহূর্তে বারুদ,এ এক অদ্ভুত, অস্থির দাবানল।
এ দাবানলের আগুনে পুড়ে ছারখার বিষজ্বালা
শোষণ, বঞ্চনা, লাঞ্চনা-গঞ্জনার পূর্ণ ষোলকলা।
মৃত্যুকে ভুলে অশান্ত মনে মিটিয়ে বিপ্লবী ক্ষুধা
পান করলে রক্তের নহরে মুক্তির অমিয় সুধা।
তুমি প্রলয়ের ওঙ্কার, বিষাক্ত ঝঙ্কার মহা জলাধীর
তুমি বিশ্ব নেতা জাতির পিতা আপামর বাঙালির।

১০’জানুয়ারী বাতাস ভারী অপেক্ষমান চারপাশ
মুখে জয়ধ্বনি খুঁজছে চোখের মনি, খুশির উচ্ছ্বাস
প্রতীক্ষায় চুপচাপ, অশ্রুবারি আকাশে বাতাসে-
সবার মনে মুজিব ক্ষুধা, মুজিব মোদের কই আসে
তুমি আসলে বীরের বেশে, সোনার বাংলাদেশে
অপেক্ষমান জনতার পাল, উঠলো আবার হেসে।
তর্জনী উঁচিয়ে শোনালে অসাম্প্রদায়িক স্বপ্ন-গাঁথা
ভুললো সবাই দুঃখের নহর যুদ্ধের দুঃখ ব্যথা।
তব অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতার বলিষ্ঠ ভাষণ
বাঙালিকে দিল দিশা, তোমাকে দিল উচ্চ আসন।

তুমি হেনরির তলাবিহীন ঝুঁড়িতে করে স্বপ্ন চাষ
ফিরিয়ে দিলে কৃষক-তাঁতির হারানো উচ্ছ্বাস।
তোমার আলোয় গগন চাঁদ উঠলো দূরে হেসে
সোনার ফসল, ফললো আবার সোনার বঙ্গদেশে
ফুললো সাগর চোখের নাগর ছুটলো দীর্ঘশ্বাস
জোয়ার এলো দুয়ার খুলে, বুক ফাটা নিঃশ্বাস।
তুমি এলে মুক্তির মশাল, দুরন্ত রাখাল ছেলে
স্বজনহারার স্বজন সেজে আগুনের মশাল ঠেলে
তুমি জল্লাদের শ্বাপদ নখর চূর্ণ, মৃত্যু মঞ্চের হাসি
ফাঁসিরমঞ্চে শেষইচ্ছায় বললে, বাংলা ভালোবাসি

তুমি জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত উত্তপ্ত রাজপথ
তুমি রক্ত মৃত্যু নতুবা স্বাধীন বাংলা, জীবন্ত শপথ।
তুমি ছিন্ন আশা দীর্ণ করে, ক্ষয় করে বরাভয়
বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন নিয়ে জয় করলে সব পরাজয়।
তুমি মায়ের প্রতি সন্তানের অস্পর্শ নাড়ীর টান
তুমি সিন্ধুর বুকে দিশাহীন তরীর জলন্ত অনির্বাণ
তুমি দিশেহারা জাতির দিশা, স্বজহারার চিৎকার
তুমি সম্ভ্রমহারার বুকের জ্বালা, অসভ্যের ধিক্কার।
তুমি টালমাটাল পৃথিবীর সবাক অবাক অভ্যূদয়
তুমি আত্মম্ভর আশায় জাগা অস্ফুট হিমালয়।

তুমি দেশকে করে চির আপন, ঘরকে করে পর
বেছে নিলে বন্ধিদশা, ঘাতকের লাল কারাগার।
তোমার আহ্বানে পড়ল সাড়া, উঠলো কোলাহল
রক্ত নদীতে কাটল সাঁতার আমজনতার পাল।
তোমার মৃত্যু ক্ষমতা লোভীর দস্যূতারই শ্বাস,
ক্লেদক্লিষ্ট পৃথিবীতে, আগস্ট এক বর্বর ইতিহাস।
তোমাকে মারতে পাক আর্মিও ভয়ে টালমাটাল
অকৃতজ্ঞ বাঙালি’সে শ্বাপেই আজ হাতে রক্তলাল
ক্ষুরধার পৃথিবীতে যদি করি পূর্ণ মনোনিবেশ
বঙ্গবন্ধু মানে পাই বিশ্ববন্ধু, অবাক বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *