অনলাইন ডেস্ক :
সাম্প্রতিক বিবিসি’সহ আন্তর্জাতিক বেশ কিছু গণমাধ্যমে পেগাসাস নামের একটি আড়িপাতা সফটওয়্যার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে সারা বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এই সফটওয়্যারের সাহায্যে যেকোন ফোনের সকল ডাটা হ্যাক করা সম্ভব বলে দাবি করা হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
বিবিসির এক রিপোর্টে জানা যায়, এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ৫০ হাজারের মতো মানুষের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে এবং ফোনের ব্যবহারকারীরা এবিষয়ে কিছু জানতেও পারেনি।
ইসরায়েলি একটি প্রতিষ্ঠান এনএসও এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে যা বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এনএসও বলছে, সাধারণ মানুষের ফোনে আড়ি পাতার জন্য তাদের পেগাসাস কেউ ব্যবহার করেনি।
সাধারণত ই-মেইল কিম্বা বার্তা পাঠিয়ে ফোনে হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। কেউ যখন সেই ই-মেইলের লিঙ্ক বা মেসেজে ক্লিক করেন তখনই ফোনে একটি সফটওয়্যার ইন্সটল হয়ে যায়, যার সাহায্যে ওই ফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কিন্তু পেগাসাসের সাহায্যে এই কাজটিই করা হয়েছে অভিনব উপায়ে। এর জন্য ফোনের ব্যবহারকারীর কোনো স্পাম লিঙ্কে ক্লিক করার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়নি।
প্রযুক্তিবিদদের মতে, পেগাসাস একটি শক্তিশালী সফটওয়্যার যার সাহায্যে নানা উপায়ে ফোন হ্যাক করা যায়। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে এই পেগাসাস সফটওয়্যার মোবাইল ফোন হ্যাক করার জন্য একটি মারাত্মক উপায় ব্যবহার করে যার নাম- ‘জিরো ক্লিক’।
অর্থাৎ এর জন্য কোন ফোন ব্যবহারকারীকে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করতে হয় না, কোন কিছু ডাউনলোডও করতে হয় না, কোনো মেসেজেরও রিপ্লাই দিতে হয় না, কিছু খুলতেও হয় না, কোনো অ্যাপ ইন্সটলও করতে হয় না, কোনো ওয়েবসাইটেও ভিজিট করতে হয় না। এক কথায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে কিছুই করতে হয় না।
কোন ফোন ব্যবহারকারীর মোবাইলের সকল ডাটা হ্যাক করার জন্য হ্যাকারদের শুধু প্রয়োজন হবে ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, অথবা ই-মেইল অ্যাড্রেস যেটা দিয়ে ব্যবহারকারী তার ফোন ব্যবহার করেন।
আয়ারল্যান্ডে তথ্য প্রযুক্তিবিদ নাসিম মাহ্মুদ, যিনি ডাবলিনে চিকিৎসা ও উদ্ভাবন সংক্রান্ত আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন, তিনি বলছেন, জিরো ক্লিকে মোবাইল ফোনে কোনো সফটওয়্যার স্থাপন করা খুবই কঠিন ও আধুনিক একটি ধাপ।
“মোবাইল ফোন কিন্তু নিয়মিত আপডেট হয়। যখন আপডেট হয় তখন এটি নতুন একটি সফটওয়্যার তার সুনির্দিষ্ট উৎস থেকে ইন্সটল করে থাকে। কিন্তু জিরো ক্লিকে সেটা করতে পারার অর্থ হচ্ছে হ্যাকাররা তখন ওই ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়, যেটা অত্যন্ত ভয়ের ব্যাপার।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আড়ি পাতার পুরো প্রক্রিয়াটিই ঘটে নিরবে এবং অবশ্যই ব্যবহারকারীর অজান্তে। এজন্য ফোনে যে মেসেজ পাঠানো হয় নোটিফিকেশনে সেটি দেখাও যায় না।
এর পর ম্যালওয়্যারটি নিজে নিজেই ফোনে ইন্সটল হয়ে যায়।
পেগাসাসের সাহায্যে ব্যবহারকারীর ফোনে যা কিছু আছে তার সবই চলে যায় হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে। নিজ ফোনে ব্যবহারকারী যা কিছু দেখতে পায়, হ্যাকাররাও সেটা দেখতে পায়, ব্যবহারকারী তার ফোনে যা করতে পারে, হ্যাকাররাও সেটা করতে পারে।
ধরেন, পেগাসাস যদি জিরো ক্লীকের প্রক্রিয়ায় আপনার ফোনের একসেস নিয়ে নেয়, তাহলে আপনার ফোনে হোয়্যাটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম, ফেসবুক মেসেঞ্জার ইত্যাদি অ্যাপের সাহায্যে যেসব টেক্সট মেসেজ আদান প্রদান করা হবে তার সবই হ্যাকাররা দেখতে ও পড়তে পারে। আপনার ফোন কলের সকল কথাবার্তা শুনতে পারে। আপনার ফোনে যেসব ছবি/ভিডিও আছে সেসব ছবি/ভিডিও সবই দেখতে পারে, ই-মেইল পড়তে পারে। এমনকি আপনি যেসব পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন সেগুলোও চলে যাবে হ্যাকারদের হাতে।
এখানেই শেষ হয়, আপনার ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন অন করে ফোনের আশেপাশে যা কিছু হচ্ছে সেসবও তারা দেখতে পারবে এবং শুনতে পারবে।
তাই বলা যায় পেগাসাসের জিরো ক্লীক একসেস একটি ভয়ংকর মারাত্মক প্রক্রিয়া ফোনে আড়িপাতার জন্য। তবে এর প্রতিকার কি হতে পারে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন সমাধান এখনও বের করতে পারেনি প্রযুক্তিবিদরা।
মূল তথ্যসূত্র : বিবিসি।