অনলাইন ডেস্ক :
গত ১৩ জুন ঢাকা বোটক্লাবে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ আনেন চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের সূত্রে এই নায়িকার সঙ্গে পরিচয় গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনের। এরই সূত্র ধরে শুরু হয় প্রেম-প্রণয়।
দুই মাস না যেতেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। বাসা থেকে মাদক উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সেই পরীমনি এবার আসামি হয়ে ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
জানা যায়, আগের মামলা তদন্তের সূত্রে পরিচয় থেকে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে প্রণয়ে জড়ান পরীমনি। এরই মধ্যে পরীমনি রিমান্ডে অকপটে জানিয়েছেন এই সম্পর্কের কথা।
তিনি জানান, মামলার সূত্রে কথা বলতে বলতে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। এরপর তারা নিয়মিত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যেতেন। এমনকি গোলাম সাকলায়েন তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ তিনি গত ১ আগস্ট গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের সরকারি ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন।
সূত্র জানায়, পরীমনিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কটি ফাঁস হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাকলায়েনের বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজে পরীমনির বক্তব্যের সত্যতা পান।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ১ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে পরীমনি নিজের গাড়ি নিয়ে গোলাম সাকলায়েনের বাসায় যান। এ সময় নিচে নেমে তাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে যান খোদ গোলাম সাকলায়েন। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর রাত ২টার দিকে পরীমনি ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান, তখনও তাকে এগিয়ে দেন ওই ডিবি কর্মকর্তা।
পরীমনির সহযোগী দীপু জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতেন বলে জানিয়েছেন।
দীপু দাবি করেন, ঈদের সময় পরীমনির বাসায় গিয়ে গোলাম সাকলায়েন তিন দিন ছিলেন। পরীমনিই তাকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে গোলাম সাকলায়েন নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করেন। পরে সাকলায়েন বিবাহিত জানতে পারলে পরীমনি ক্ষুব্ধ হন। এ সময় গোলাম সাকলায়েন তার ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে দাবি করেন।
জানা গেছে, গোলাম সাকলায়েন বিবাহিত এবং তার স্ত্রী প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। (তথ্য সূত্র : বাংলা নিউজ)
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পহেলা আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিট, পরীমনির সাদা রংয়ের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি ( ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫ ৯৬ ৫৩) এসে থামে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক ভবনের সামনে। প্রথম সেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টি-শার্ট পরিহিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নামেন। এরপর সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরিহিত অবস্থায় নামেন হালের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। এ সময় তার কোলে ছিল তার প্রিয় বাদামি রংয়ের কুকুর, যার নাম পরিমনি আদর করে দিয়েছে ‘কুটু’।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বাসভবনের নিচে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে বাসার চাবি নেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তারা দুজন লিফটে করে ওই কর্মকর্তার বাসায় যান। এরপর পরীমনির গাড়ি থেকে একটি ট্রলি ব্যাগও ওই কর্মকর্তার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
রাত দেড়টা, ওই ভবনের সামনে আবার আসে পরীমনির গাড়ি। চালক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সেখানে ঢোকেন। গাড়ি পার্কিং করে তিনি মোবাইলে উচ্চ শব্দে গান ছেড়ে শুনছিলেন।
সেই সময় দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা সদস্যের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। কারণ, পুলিশের নিজস্ব কোন চালক এতো রাতে আবাসিক এলাকার মধ্যে এভাবে গান শোনার কথা না।
তিনি তখন পরীমনির ওই চালকের কাছে তার পরিচয় আবার জানতে চান। চালক তখন ওই নিরাপত্তা কর্মিকে বলেন, পরীমনির সাথে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিয়ে হয়েছে বলে তিনি জানেন।
এই গাড়ি আদৌ পরীমনির কিনা তা সন্দেহ করলে, চালক ভাইরাল হওয়া বোট ক্লাবে ক্লাবের ভিডিও ফুটেজ নিরাপত্তা কর্মীদের দেখিয়ে বলেন যে তার গাড়ি ও সেই গাড়ি একই গাড়ি কিনা। তখন উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টি বিশ্বাস করে পরিস্থিতি দেখতে থাকে। সোয়া দুইটার দিকে পরীমনি তার প্রিয় কুটু এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও সাথে নিয়ে যাওয়া ট্রলি ব্যাগসহ বহুতল সেই ভবন থেকে নিচে নেমে আসেন।
সকালের সাদা পোশাকের পরিবর্তে এ সময় পরীমনির পড়নে ছিল কালো রংয়ের পোশাক আর পুলিশ কর্মকর্তার লাল টি শার্টের পরিবর্তে সাদা রংয়ের টি শার্ট। (তথ্যসূত্র : একাত্তর টিভি)
উক্ত ঘটনার পর সাকলায়েনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ প্রশাসন। পরীমনির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বদলি করা হয়। গত শনিবার দুপুরে এডিসি সাকলায়েনকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের এক আদেশে ডিবি থেকে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (দাঙ্গা দমন বিভাগ, পশ্চিম) বদলি করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বদলির আদেশের আগে সাকলায়েনকে ডিবির সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়। (তথ্যসূত্র : প্রথম আলো)
এরপর এই রেশ কাটতে না কাটতেই দেড় মিনিটের একটি ভিডিও ইউটিউবে ভাইরাল হয় মঙ্গলবার দিন। সেই দেড় মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায় পরীমনি শুভ জন্মদিনের কেক কেটে সাকলায়েনকে খাইয়ে দেওয়ার সময় তার ঠোঁটের চুমু খান। এরপর ভিডিওর শেষের দিকেও কেক নিয়ে তাদের দুজনের ঠোঁটে ঠোঁটে চুমুর প্রয়াস দেখা যায়। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে বেশ কানাঘুষা চলছে পরীমনি ও সাকলায়েনের প্রেম নিয়ে। এই চুমুর ভিডিওর ফলে তাদের প্রেমপ্রণয়ের গুঞ্জন এখন আর মিথ্যে বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছেন নেটিজনেরা।