নিউজ ডেস্ক :
জিআইজেড বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘রুল-অব-ল প্রোগ্রাম’-এর অধীনে বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ’ কার্যক্রমটি ১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণে দেশের ৬৪টি জেলার মোট ৩১৫ জন নারী বিচারক অংশগ্রহণ করেন। দশটি ব্যাচে অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণগুলো জার্মান ও ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জিআইজেড-এর যৌথ প্রকল্পের কারিগরী সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হোসনে আরা বেগম, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উম্মে কুলসুম, যুগ্ম সচিব (মতামত), আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তাহেরা ইয়াসমিন, অপারেসন্স ডিরেক্টর, রুল-অব-ল প্রোগ্রাম, জিআইজেড বাংলাদেশ এবং মাকসুদা পারভীন, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা জাজেজ এসোসিয়েশন। অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ ‘মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ- প্রশিক্ষণার্থীদের সহায়িকা’ বইটির মোড়কও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও অর্জন উপস্থাপন করেন ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। প্রশিক্ষণটি যৌথভাবে আয়োজন করার জন্য তিনি বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতেও এই ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়কসহ অন্যান্য কার্যক্রমেও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন যুক্ত থাকবে বলে তিনি তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী ও সভাপতির বক্তব্যে হোসনে আরা বেগম বলেন, প্রশিক্ষণার্থীদের মূল্যায়ন বক্তব্য থেকেই এই প্রশিক্ষণটির সফলতার গল্প পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য তৈরি সহায়িকাটিও খুবই সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল, যা সকলের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এমনকি যারা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন নাই, তারাও উপকৃত হবেন। এই ধরণের বাস্তবিক জ্ঞান ভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রশিক্ষণ সবার জন্যই প্রয়োজন। তিনি আরও মনে করেন, এই ধরণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সদস্যরা অনেক উপকৃত হবেন এবং বিচার কাজের গুণগতমানের উন্নতি ঘটবে।
উম্মে কুলসুম বলেন, সমাজে নারী মানেই হল সে কিছু জানে না বা পারে না, তার কোন যোগ্যতা নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের নারী বিচারকগণ অত্যন্ত চৌকশ ও তাদের কাজের গুণগতমান অন্য সবার চেয়ে বা পুরুষ বিচারকদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে বেশি এবং তাদের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ এখন অনেক উন্নত ও সময়োপযোগী। আমি আশা করছি, এই প্রশিক্ষণ তাদেরকে আরও অনুপ্রাণিত করছে এবং ভবিষ্যতে নারী বিচারকদের পাশাপাশি পুরূষ বিচারকদের জন্যও মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
জিআইজেড বাংলাদেশ এর ‘রুল-অব-ল’ প্রোগ্রামের অপারেশন্স ডিরেক্টর তাহেরা ইয়াসমিন বলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জিআইজেড-এর যৌথ প্রকল্পটি ২০০৮ সাল থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত বছর কোভিড-১৯ প্রতিরোধে করণীয় ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সফলভাবে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে প্রশিক্ষণে বিচারকবৃন্দসহ (জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা) নানা স্তরের কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছিলেন।
নারী বিচারকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণটি আয়োজন করার ক্ষেত্রে তিনি উম্মে কুলসুম, যুগ্ম সচিব (মতামত), আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মহিলা জাজ এসোসিয়েশনের সার্বিক সহযোগীকার বিষয়টি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। পাশাপাশি তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তাদের প্রতি যারা এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি সূচারুরূপে পরিচালনা করেছেন বিশেষ করে প্রশিক্ষকবৃন্দ, আর প্রশিক্ষণে অংশগ্রণকারীবৃন্দ এছাড়াও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মীবৃন্দ এবং তাদের জিআইজেডের সহকর্মীবৃন্দ।
তিনি মনে করেন যে, সফলভাবে প্রশিক্ষণটির সমাপ্তি ঘটেছে সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় তাই তিনি সকলের নিকট কৃতজ্ঞ। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইতিপূর্বে এই একই প্রশিক্ষণ কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল সার্ভিসেস-এর কর্মকর্তাদেরও সভলভাবে প্রদান করা হয়।
মাকসুদা পারভীন বলেন, প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল এবং প্রশিক্ষণটির মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা অনেক উপকৃত হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কোন বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে যদি সন্তানদের ইতিবাচক প্রতিপালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় তাহলে সকল নারী বিচারকবৃন্দ আরও উপকৃত হবেন। পাশাপাশি তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ প্রদান করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনজন প্রশিক্ষণার্থী (নারী বিচারক) প্রশিক্ষণ বিষয়ে তাঁদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খুব গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি এ ধরণের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের আয়োজন করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রশিক্ষনার্থীরা আরও মনে করেন যে, এই প্রশিক্ষণ স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রদান করা প্রয়োজন যার ফলে তাদের মাঝে শক্ত মানসিক ভিত্তি তৈরী হবে। যে সকল নারী বিচারক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়নি তাদেরকেও এই প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার জন্য তাঁরা অনুরোধ জানান। পরিশেষে, সভাপতির মূল্যবান ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।