
অনলাইন ডেস্ক :
সাংবাদিকতা, রাজনীতি ও চলচ্চিত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সন্তান তাজুল ইসলাম তাজ। যিনি ভৈরব’সহ সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মিডিয়া জগতে তাজ ভৈরবী নামে পরিচিতি।
সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ভৈরব অনলাইন নিউজ ক্লাব তাকে ‘গোল্ডেন তাজ ভৈরবী’ নামে খেতাব দেন।
তাজ ভৈরবী ভৈরবের সাংবাদিক অঙ্গনের একজন নেতা হলেও। তিনি একাধারে ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সংগঠক, সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি যুবক বয়স থেকেই বহুমুখী পরিচয়ে সমাদৃত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার বন্দরনগরী ভৈরবের ভৈরবপুর উত্তর পাড়ার কৃতি সন্তান তাজ ভৈরবী। তিনি ভৈরব সরকারি কেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ভৈরব সরকারি হাজী আসমত আলী কলেজে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন নেতৃত্বগুণে অনন্য ও সংস্কৃতিমনা।
তাজ ভৈরবী তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ৮০’র দর্শকের পর জাতীয় পার্টির ক্ষমতাকালীন সময়ে প্রথমে জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ ভৈরব উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ও যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে তিনি ভৈরব উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৭ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সেই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান ও বিএনপি থেকে ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম গিয়াস উদ্দিন।
এরপর রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিক পেশায় নিয়মিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তাঁর সাহসী কলম ও অনুসন্ধানী রিপোর্টিং তাঁকে পরিচিত করে তোলে একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে।
তিনি কাজ করেছেন জাতীয় দৈনিক বাংলার বানী, রূপালী দেশ এবং দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ভৈরব প্রতিনিধি হিসেবে। তারপর ২০০৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভৈরবের স্বনামধন্য সাপ্তাহিক ‘অবলম্বন’ পত্রিকা, যা ১৭ বছর ধরে নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। তিনি শুরু থেকেই এই পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পত্রিকাটি তার একক মালিকানায় রয়েছে।
এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে গঠন করেন ভৈরব রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটি। এই সাংবাদিক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে এখনও দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি ভৈরব উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং ভৈরব অনলাইন নিউজ ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়া তিনি ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ভৈরব পৌর শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
তাজ ভৈরবী সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হওয়া শুরু করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালী যুগে অভিনয় করে। তিনি ৯০ দশকের মাঝামাঝির দিকে বাংলা চলচ্চিত্রে খল-চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তিনি ৯টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে- মুক্তি চাই, লঙ্কাকাণ্ড, রাজার ভাই বাদশা, দুর্ধর্ষ সম্রাট, আলি কেন গোলাম, এবং অনন্ত জলিল অভিনীত দ্য স্পিড (২০১৩)।
এছাড়া ২০১৯ সালে তিনি টেলিফিল্ম সুপারস্টার-এ অভিনয় করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর সহ-অভিনেতা ছিলেন প্রয়াত রাজীব, মনোয়ার হোসেন ডিপজল, মেগাস্টার উজ্জল,মান্না, ইলিয়াস কাঞ্চন, দিতি,ফেরদৌস, রুবেল,অমিত হাসান, মুনমুন, শিল্পী, শতাব্দী রায়, এটিএম শামসুজ্জামান, দিলদার সহ খ্যাতিমান সব শিল্পীরা।
চলচ্চিত্রে দুর্ধর্ষ সম্রাট চলচ্চিত্রে “ভৈরবী” নামের খল চরিত্রে অভিনয় করেই তিনি দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন গড়ে নেন, সেখান থেকেই তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় “তাজ ভৈরবী”।
সাংবাদিকতা ও রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে।
তিনি মেঘনা সাংস্কৃতিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ভৈরব শাখার উপদেষ্টা, পার্থিব অভিনয় শিল্পী পরিবারের উপদেষ্টা, এবং ভৈরব কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ভৈরব ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ও অবলম্বন মাল্টিপারপার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাজ ভৈরবী তার নিজ ক্যারিয়ারে যেমন সফলতা অর্জন করেছেন। ঠিক তিনি একজ পরিবারের অভিভাবক ও পিতা হিসেবেও সফল। স্ত্রী, তিন কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে তার সংসার জীবনও অত্যন্ত সুখী ও সমৃদ্ধিপূর্ণ।
তাজ ভৈরবী মনে করেন সত্য, ন্যায় ও সাহসই তাঁর জীবনের সফলতার মূলমন্ত্র। তিনি সর্বদা নতুন উদ্দেশ্যে বলেন- “সত্য বলো, সাহসী হও, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো।” — এই দর্শন নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন সমাজ, গণমাধ্যম ও মানবতার কল্যাণে।
একজরে তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-
আসল নাম : তাজুল ইসলাম তাজ।
চলচ্চিত্রে নাম : তাজ ভৈরবী।
খেতাব : গোল্ডেন তাজ ভৈরবী।
বয়স : ৫৫ বছর।
জন্মস্থান : ভৈরবপুর উত্তর পাড়া, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।
পিতা : মরহুম নজুম উদ্দিন।
পেশা : সাংবাদিক, সম্পাদক, অভিনেতা ও সংগঠক।
পদ-পদবি :
সভাপতি, ভৈরব রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটি।
সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (ভৈরব পৌর শাখা)।
সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক অবলম্বন।
তাজুল ইসলাম তাজভৈরবী শুধু একজন সাংবাদিক নন, তিনি কালের গর্ভে উঠে আসা একটি ইতিহাস, একাধিক প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। ভৈরবের মাটি ও মানুষের ভালোবাসায় তিনি হয়ে উঠেছেন স্থানীয় সাংবাদিকতা, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর কাজ, চিন্তা ও চরিত্র আগামী প্রজন্মের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে— এমনটাই প্রত্যাশা ভৈরববাসীর।
তথ্য সূত্র : সাংবাদিক শামীম আহমেদ।
সম্পাদনা : বার্তাকাল ডেস্ক।
