
বার্তাকাল ডেস্ক :
আকাশ নিরাপত্তায় বিশ্বজুড়ে আলোচিত নাম ‘আইরন ডোম’। ইসরায়েলের তৈরি এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বল্প-পাল্লার রকেট ও আর্টিলারি শেলকে আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম। মূলত বেসামরিক এলাকাগুলোকে হঠাৎ রকেট বা মিশাইল হামলা থেকে রক্ষা করতেই এই প্রযুক্তির উদ্ভব।
কিভাবে কাজ করে আইরন ডোম?
আইরন ডোমের কার্যক্রম তিনটি প্রধান ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপে, একটি শক্তিশালী রাডার সিস্টেম প্রতিপক্ষের ছোড়া রকেট বা শেল শনাক্ত করে। এরপর সেই রকেটের গতি, দিক ও সম্ভাব্য আঘাতের স্থান নির্ধারণ করে একটি ট্র্যাকিং ও ক্যালকুলেশন সিস্টেম।
দ্বিতীয় ধাপে, সিস্টেমটি বিশ্লেষণ করে কোন রকেটটি জনবহুল এলাকায় পড়তে পারে এবং কোনটি খোলা বা নিরাপদ এলাকায় পড়বে। এরপর কেবলমাত্র জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ রকেটগুলোর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তৃতীয় ধাপে, যেসব রকেট বা শেল সত্যিকার হুমকি তৈরি করতে পারে, সেগুলোর বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয় ‘তামির’ নামের একটি প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। এটি প্রতিপক্ষের রকেটকে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। আইরন ডোমের প্রতিক্রিয়া সময় এতটাই কম যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রতিপক্ষের টার্গেট শনাক্ত করতে এবং তা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা
আইরন ডোমের সফলতার হার প্রায় ৮৫% থেকে ৯০% পর্যন্ত, যা একে বিশ্বের অন্যতম নির্ভুল আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে পরিণত করেছে। এতে ব্যবহৃত সেন্সর ও সফটওয়্যার এতটাই উন্নত যে প্রতিটি রকেটকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে কেবলমাত্র হুমকিস্বরূপ রকেটেই প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
তবে, এই প্রযুক্তির বড় একটি চ্যালেঞ্জ হল খরচ। প্রতিটি ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৪৫ লাখ টাকা থেকে ১ কোটিরও বেশি, যেখানে প্রতিপক্ষের ব্যবহৃত স্বল্পমূল্যের রকেটের দাম মাত্র ৩৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা হলো—যদি একসাথে বিপুল সংখ্যক রকেট ছোড়া হয়, তাহলে সবগুলো প্রতিহত করা কঠিন হতে পারে। এছাড়া, এটি কেবল স্বল্প-পাল্লার হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর। কিন্তু দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল বা হাইপারসনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা সীমিত। ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইরন ডোমকে অকার্যকর করাও সম্ভব হতে পারে।
বলা যায়, বর্তমান সময়ের অন্যতম শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাম নিঃসন্দেহে আইরন ডোম। বিশ্ব নিরাপত্তা পরিসরে এটি একটি বড় উদাহরণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বেসামরিক জনসাধারণকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আইরন ডোম বেশ কার্যকর।
