ভৈরবে মানব পাচারকারী মামলার আসামী গ্রেফতার

ভৈরবে মানব পাচারকারী মামলার আসামী গ্রেফতার

সোহান রহমান | ভৈরব ( কিশোরগঞ্জ) ‌অনলাইন ডেস্ক |

ভৈরবে মানব পাচারকারী মামলার আসামী রাসেল মিয়া (৩০)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে শহরের তাতাঁরকান্দি গ্রামের কুদ্দুছ মিয়ার পুত্র। গ্রেফতারকৃতকে আজ শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। জানাযায় নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার চৌগরিয়া গ্রামের এবাদুল্লাহ তার পুত্র সাকিবুল’কে সরকারিভাবে ইতালী পাঠানোর জন্য এবাদুল্লাহর কাছ থেকে ২০২৩ সালে নগদ সাড়ে ১৪ লাখ টাকা নিয়ে রাসেল সাকিবুল’কে লিবিয়া নিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেয়। পরে তারা সাকিবুল’কে একটি রুমে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এবাদুল্লাহ মুক্তিপণ দিতে না পারায় রাসেলের লোকজন তাকে আটকে রেখেছে। এ ঘটনার পর রাসেল ভৈরবে তার বাড়িতে এলে রাসেলকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তাতাঁরকান্দি গ্রামে জনতা তাকে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে শুক্রবার রাতে এবাদুল্লাহ বাদী হয়ে মানব পাচারকারী রাসেলের বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মানবপাচারকারী আইনে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০৫, । অনুসন্ধানে আরো জানাযায় গ্রেফতারকৃত রাসেল ভৈরবসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০/১২ জন লোকের কাছ থেকে লিবিয়া দিয়ে অবৈধভাবে সাগর পথে ইতালী পাঠানোর কথা বলে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভূগিদের অভিযোগ তাদের লোকজন লিবিয়ায় অপহরণকারীদের হাতে বন্দি হয়ে আছে, আবার কেউ লিবিয়ায় জেলে আছে। অপহরণকারীরা তাদেরকে অমানসিক নির্যাতন অত্যাচার করছে মুক্তিপণের টাকা দিতে। টাকা না দিলে তাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ভূক্তভূগীদের মধ্য অনেকেই তাদের সন্তানদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঘটনার জন্য আটককৃত রাসেল মিয়া দায়ী বলে তারা অভিযোগ করেন। জানা গেছে, লিবিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইতালী পাঠাতে যারা রাসেল মিয়াকে টাকা দিয়েছে তারা হলো ভৈরব পৌর শহরের হানিফ মিয়ার ছেলে রাসেল (১৮), একই এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (২৫), হবিগন্জের মাধবপুর এলাকার সবুজ (২৩), কিশোরগন্জের তোফায়েল (২৪), নরসিংদির শিবপুর এলাকার এবাদুল্লাহ’র ছেলে শফিকুল (২০), ভৈরব পৌর শহরের জগনাথপুর এলাকার রইছ উদ্দিনের ছেলে হাছেন আলী (২৪), শহরের আমলাপাড়া এলাকার নরিছলামের ছেলে সুমন (২১)। উল্লেখিত ৭ জন ছাড়াও আরও তিনজন রয়েছে যারা তাকে টাকা দিয়েছে। তারা সবাই মিলে প্রায় দুইকোটি টাকা রাসেলকে দেয়ার পরও গত ৬ মাসের মধ্য এখনও কাউকে ইতালী পাঠাতে পারেনি রাসেল। এদের মধ্য কয়েকজন লিবিয়া কারাগারে জেল খেটেছে, আবার কেউ কেউ অপহরণকারীদের হাতে বন্দি আছে বলে পরিবারগুলির অভিযোগ। টাকা দেয়ার পর দীর্ঘদিন যাবত ভূক্তভূগীরা মানব পাচারকারী রাসেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলনা। বৃহস্পতিবার রাতে সে বাড়ী এলে জনতাসহ ভূক্তভূগীরা তাকে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে আসে।

ভূক্তভূগি ইউনুছ মিয়া বলেন, আমার ছেলে ফারুককে ইতালী পাঠাতে রাসেলকে ২৪ লাখ টাকা দিয়েছি চারমাস আগে, এখন ছেলের খোঁজ নেই। শুনেছি অপহরণকারীদের হাতে লিবিয়ায় বন্দি। রাসেলে বাবা অভিযোগ করেছেন আমার ছেলেকে ইতালী পাঠাতে ৭ লাখ টাকা দিয়েছি কিন্ত সে এখন লিবিয়ার জেলে বন্দি। এমনিভাবে সজীব ও তোফায়েল ২২ লাখ টাকা, শফিকুল ২৩ লাখ টাকা, হাছেন আলীসহ তিনজনে ৪০ লাখ টাকা, সুমন ১৪ লাখ টাকা রাসেলকে দিলেও সে তাদেরকে লিবিয়া পাঠিয়ে বিপদে ফেলেছে বলে তাদের অভিযোগ। অপহরণকারীরা অপহৃতদেরকে নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছে এদেশে পরিবারের কাছে। তারা নতুন করে কারো কারো কাছে প্রত্যেকের কাছে ১০/১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। এত পরিমান টাকা কোন পরিবারের দেয়ার সাধ্য নেই বলে জানান তারা। এমনিতেই ঘরবাড়ী, জমিজমা, স্বর্ন বা মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে রাসেলকে টাকা দিয়েছে সন্তানকে ইতালী পাঠানো আশায়। প্রত্যাশা ছিল তাদের সন্তানরা স্বপ্নের দেশ ইতালী গিয়ে কামাই রোজগার করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আনবে কিন্ত সেই আশা ধূলিসাত করে দিয়েছে মানবপাচারকারী রাসেল।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, মানবপাচারকারী রাসেলের বিরুদ্ধে এবাদুল্লাহ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জনতা তাকে আটক করলে খবর পেয়ে আমরা তাকে তার নিরাপত্তার জন্য উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *