ভৈরবে দিনেদুপুরে ছিনতাই করতে গিয়ে গণধোলাই খেল দুই ছিনতাইকারী

ভৈরবে দিনেদুপুরে ছিনতাই করতে গিয়ে গণধোলাই খেল দুই ছিনতাইকারী

অনলাইন ডেস্ক :

ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে দিনের পর দিন। ছিনতাইয়ের বিষয়ে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের ব্যাপক ধরপাকড়াও থাকলেও এর কিছুদিন পর বিরতি দিয়ে দিয়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া অজানা তদবির এবং আইনের ফাঁকফোকড়ে অধিকাংশ ছিনতাইকারীরা গ্রেফতারের কিছুদিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়। এতে ভয়ে আতংকে দিন পার করছে ভৈরব দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীরা। এছাড়া ভৈরবের কিছু কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা হয়ে উঠে অনেক বেশি মর্মান্তিক। ভৈরবের বাহিরের এলাকার ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে জানা যায় ছিনতাইকারীরা শুধু ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। কিন্তু এখানে ব্যাতিক্রম ভৈরবের ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো। কারণ জনমনে আতংক আছে ভৈরবের ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো অনেক ক্ষেত্রে ভয়ংকর। ভৈরবের ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের সময় ভুক্তভোগী পথচারীকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত করে ফেলে প্রায়ই৷ এবং এক্ষেত্রে অনেক সময় ভুক্তভোগীকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এমন কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ অতীতে বহুবার অনেক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। কিন্তু তারপরও মেলেনি এসব ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্যের সমাধান! জনমনে আছে, এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় যারা জড়িত থাকে তাদের স্টেপ থাকে এটম টু মার্ডারের। কারণ তারা পথচারীদের এমন ভাবে ছুরিকাঘাত করে, অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এত এত সংবাদ প্রকাশের পরও এসব ছিনতাইয়ের ঘটনার তেমন কোন সুরাহা হয়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পথচারী বলেন, ‘ভৈরবের ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনা না, এটি ছিনতাইয়ের পাশাপাশি এটুম টু মার্ডারের মতই ঘটনা। এই ক্ষেত্রে শুধু ছিনতাইয়ের মামলা করলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় বা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। যদি এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় আহত ব্যাক্তিরা ছিনতাইকারীরদের বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলার পাশাপাশি এটুম টু মার্ডার মামলা করতো তাহলে অপরাধীদের জামিনে মুক্তি পাওয়া কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে যেত।’

এদিকে শুক্রবার ২০ অক্টোবর আনুমানিক আড়াইটার দিকে ভৈরবের মেঘনা ত্রিসেতু এলাকায় ভৈরব নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর উপরের ফুটপাতের মাঝখানে এক মহিলা পথচারীর কাছ থেকে দুইজন ছিনতাইকারী ছিনতাই করার সময় কয়েকজন পথচারীর হাতে আটক হয়। এসময় ছিনতাইকারীদের কাছে ধারালো সুইস গিয়ার ছুরি ছিল বলে জানা যায়। আটকের পর দুই ছিনতাইকারীকে পথচারীরা মিলে গণধোলাই দেয়।

এই ঘটনায় ভৈরবের পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ জানান, আমি আর আমার ছোট ভাই মোটরবাইক যোগে আশুগঞ্জ থেকে আসার সময় আশুগঞ্জ টুল প্লাজার ১০০ গজ দূরে একজন পুরুষ তার বউ এবং বাচ্চা নিয়ে ভৈরব থেকে আশুগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ২ জন ছিনতাইকারী ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাদেরকে হামলা করে। এই বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ে, তখন আমরা বাইক থেকে নেমে ঐ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলাম- কি হইছে? মহিলাটি কান্নাকাটি করে বলেন, আমার যা আছে সব নিয়া যাইতেছে দুই ছিনতাইকারী।’ তখন ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ ও তার ছোট ভাই সাজিদ’সহ আরও কয়েকজন পথচারী মিলে ঐ দুই ছিনতাইকারী’কে আটক করে এবং ছিনতাইকারীদের হাত থেকে ঐ মহিলাকে রক্ষা করে।

উক্ত ঘটনায় আরও জানা যায় ঐ দুই ছিনতাইকারীকে ধরার পর যখন গণধোলাই দেওয়া হয় তখন ঐ ছিনতাইকারীরা ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ’কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়া দুই ছিনতাইকারীকে উত্তম-মধ্যম দেওয়ার সময় তারা আকুল সুরে বার বার পথচারীদের অনুরোধ করছিল তাদেরকে যেন পুলিশে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে ছিনতাইকারীদের ভাষ্য, তাদেরকে পুলিশে দিলে তারা গণধোলাইয়ের হাত থেকে বেঁচে যাবে। এছাড়া পথচারীদের দোষী করতে দুই ছিনতাইকারীদের একজন নিজেকে নিজে আহত করতে চেষ্টা করে এবং পথচারীদের দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়। দুই ছিনতাইকারীকে ধরার সময় তাদের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তারা তাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় দিতে রাজি হয়নি।

খবর সূত্রে আরও জানা যায়, গণধোলাইয়ের পর ছিনতাইকারীদের পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। উক্ত ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ভুক্তভোগী মহিলা হয়রানির কথা চিন্তা করে এই বিষয়টি নিয়ে মামলা করতে রাজি হয়নি বলে জানায় পথচারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *